Wednesday, 7 July 2010

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে |


RecoveryRecoveryRecovery০৭/০৭/২০১০ তারিখে প্রথম-আলোতে একটা খবর পড়লাম। খবরটি পরার পর মনে হচ্ছিল দুনিয়াতে এমন কেউ কি নেই এদের জন্য কিছু করতে পারে? কতজন কত বিলাসিতা করে। খবরটি ছিল এইরকম:


১৪ বছর বয়সী বিনিশের লক্ষ্য ছিল একজন সেবিকা বা চিকিৎসক হওয়া। এ জন্য সে রাত জেগে পড়াশোনা করত। বিদ্যুৎ না থাকলে বই পড়ত টর্চলাইট জ্বেলে। পরীক্ষায় ফলাফলও ছিল ভালো। কিন্তু রিকশাচালক বাবা আকবর সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি। এক রাতে মমতা ভুলে নির্মম হয়ে যান তিনি। পরিবারের সব সদস্যকে মেরে ফেলার এক হত্যাযজ্ঞে নামেন। বাবার দেওয়া বিষ পান করে মারা যায় বিনিশ ও তার দুই বোন। 
ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তানের লাহোর শহরে। বিষ দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের মেরে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন আকবর। কিন্তু তাঁর এই ভয়ঙ্কর লক্ষ্য থেকে রক্ষা পান স্ত্রী ও অন্য তিন সন্তান। আকবরের দেওয়া বিষ মুখে দিলেও পান করেননি স্ত্রী। অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। দারিদ্র ও দেনার দায় থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে এই নির্মম সিদ্ধান্ত নেন আকবর। বিষপানের আগে তিনি স্ত্রীকে বলেন, সন্তানদের রেখে তাঁরা মারা গেলে তাদের কষ্ট হবে। এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতেই ওদের হত্যা করতে চান তিনি। 
আকবরের স্ত্রী মুজাম্মিল বলেন, এই ঘটনার আগে আকবর বিনয়ী ছিলেন। অভাবের কারণে প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট করলেও তিনি কখনো কারও ক্ষতি করেননি। তিনি জানান, পারিবারিক ঋণের বোঝা বইতে না পেরে তিনি এমন নিষ্ঠুর হয়ে যান। যেদিন ওই ঘটনা ঘটে, সেদিনও ঋণের বিষয়টি নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে আকবরের প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। বাড়ি ফিরে তিনি সন্তানদের বিষ পান করান এবং নিজেও করেন।
একসঙ্গে চারটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার মূলে রয়েছে ৬০ হাজার রুপির দেনা। পাকিস্তানে দারিদ্র্যের এই করুণ চিত্র বেশির ভাগ সময় আড়ালেই থেকে যায়। আকবর ও তাঁর সন্তানদের মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচার হলেও আত্মহননের নেপথ্য কারণ আড়ালেই থেকে যায়। 
মুজাম্মিলের দেখভালে থাকা চিকিৎসক অধ্যাপক জাভেদ আকরাম জানান, প্রতিদিন এ ধরনের প্রায় ১০ জন বিষ খাওয়া রোগী দেখতে হয় তাঁকে। আগে এ ধরনের রোগী ছিল চার-পাঁচজন। তিনি বলেন, ‘আত্মহননে মানুষ আগে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ত। এখন শুধু বিষ ব্যবহার করে। কারণ এটি খুব সস্তা।’ অধ্যাপক আকরাম বলেন, এ ধরনের মৃত্যুর পেছনে অর্থনৈতিক কারণ জড়িত। আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের বেশির ভাগই দরিদ্র।
পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী হিনা জিলানি বলেন, পাকিস্তানের সরকার গরিবদের রক্ষায় খুব কম অর্থ ব্যয় করে। সে তুলনায় তাদের সামরিক ব্যয় অনেক বেশি। নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের অনেক মাথাব্যথা, সে তুলনায় আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তাকে তারা অবজ্ঞা করছে। এটা খুবই লজ্জাজনক যে আমরা পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী, অথচ এ দেশের অনেক নাগরিক না খেয়ে থাকে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, পাকিস্তানের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দিনে মাত্র এক বেলা খাবার পায়। বিবিসি।

Your Ad Here. Click here to view your add.

No comments:

Post a Comment