Tuesday, 20 July 2010

পৃথিবীর সব দেশে বর্ষা আসে না

যেখানে পথের শেষ, সেখান থেকে নতুন জীবন শুরু। শাওন এসেছে ফিরে নব জীবনের কথা বলতে। অনেক শাওন কেটে গেলেও এবার শাওন এলো অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে। ‘মন খুব বৃষ্টিপ্রবণ/জলের রেখা ধরে হেঁটে যাই নির্জন/পা ছুঁয়ে থাকে উষ্ণ ভুলের কৃষ্ণ শিহরণ/এই নীল বর্ষায় মনে তার বৃষ্টি বাহার/চোখে তার বৃষ্টি বিহার/বৃষ্টি নামছে/বৃষ্টি খেলছে/বৃষ্টি জাগছে/জগৎ মাতছে বৃষ্টি লীলায়/ভেসে যাচ্ছি ডুবে যাচ্ছি অনাকাঙক্ষার মোহ ও মায়ায়/অনেক মেলা ঘুরে এসে দেখছি এখন বৃষ্টিবেলা/সকল খেলা খেলে এসে খেলছি এখন বৃষ্টি খেলা।

[‘বৃষ্টিবেলা’ : শাহনাজ মুন্নী]

প্রায় প্রতিটি মঙ্গলবারকে বেশ উপভোগ করার চেষ্টা থাকে। আর বর্ষা হলে তো কথাই নেই। বর্ষা, বর্ষণ ও পানি, এই তিনটা মিলে বাংলার জনপদের প্রকৃতি ও সমাজ গঠন করে থাকে। ভারতবর্ষের মানচিত্রে দেখা যায়, উত্তর ভারতের হিমালয় পর্বতমালা, পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে দক্ষিণে শুরু হওয়া মালভূমি যা দাক্ষিণাত্য হিসেবে পরিচিত, এতদাঞ্চল বাংলাদেশের সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে। উত্তর ভারতে, নেপাল কিংবা তিব্বতের উৎসমুখে জন্ম নেয়া নদীসমূহ হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় এটাই স্বাভাবিক। কর্ণফুলী আর বঙ্গোপসাগর যেখানে মিলিত হয়েছে, সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে বর্ষা উপভোগ সে এক অন্যরকম দোলা দিয়ে যায় মনে, সাথে কুসুম-যোজিত করেছে ভিন্নমাত্রা। আজ হৃদয় নিংড়ানো প্রতিশ্রুতি চাই। হৃদয়ের স্পর্শ অনুভব যা আছে সব দাও। ভালোবাসা তো নগ্ন কিছু নয়। ভালোবাসা দেবে আর নেবে। প্রাণের সাথে প্রাণ মিলিয়ে আর মিলাবে তবেই আদিম উন্মাদনা পূর্ণতা পাবে। গভীর গহীনে সমুদ্রে অরণ্যে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে আমাদের অধিকার।

আমরা সৌভাগ্যবান, এদেশে বর্ষা আসে, আসে গ্রীষ্ম, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ছয় ঋতুচক্রের বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবদেশে বর্ষা আসে না। সেখানে বর্ষা বলে কোনো ঋতু নেই। আকাশ অঝোরে কাঁদলে বর্ষা নামে না। ব্রিটেনে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষণের আরেক ভিন্নরূপ তুষারপাত। সারা বছর তুষারপাত হলেও বর্ষা বলা যায় না। বর্ষায় মাত্রাগত ব্যাপার আছে সাহিত্যে। বর্ষণেরও নানান কিসিমের প্রকারভেদ আছে। ভারী বর্ষণ, ইনশেগুড়ি, ছাগতাড়ুয়া ইত্যাদি বর্ষণের মাত্রাগত প্রভেদ বোঝায়। মাত্রাগত প্রভেদের উপর ভর করে হৃদয়ের নাচন।

নদী আর সাগরের সঙ্গমস্থানে দেখা হলো, কিন্তু যেন জলের ভেতরে/ দেখা হলো; তুমি স্থির ভাসলে অকূলে;/আমি স্পর্শপ্রিয়, তাই আস্তে ধরে...ধরে..ধরে...ধরে/বুঝাতে চাইলাম প্রেম ওষ্ঠে...।’ ওম্‌ নিলাম তোমার বুকের ভিটা থেকে। উঠালো ঢেউ, ঢেউ সমুদ্রেই আছে, ঢেউয়ে কিন্তু সমুদ্র পাবে না। একমাত্র সমুদ্রই পৃথিবীর আদি ইতিহাস জানে। আদি ইতিহাসবেত্তার কাছে আধিপত্য সে এক অপর মিল।

বর্ষা অনেকের জীবনে জাগতিক কষ্ট নিয়ে এলেও এতে আছে প্রাণ। এর স্বাদ, বৈচিত্র্যই আলাদা। মেঘের পরে মেঘ এসে আকাশ আঁধার হয়ে এসেছে। সন্ধ্যাও বিদায় নিতে শুরু করেছে। চারদিকে ঘোর অন্ধকার, মেঘেরা দ্রুত গলে ভারী হয়ে ঝরছে, আর আমাদের সমুদ্রদর্শন সাঙ্গ হতে চায় না, সমুদ্রের তর্জন-গর্জন সত্ত্বেও। আজ ভিজতেই থাকবো, ঢেউ খেলে যাক যতো, গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠেছে এই সমুদ্রদর্শন। আজ তোমার মাথায় পড়ে স্বচ্ছ শুভ্র রাতের কণিকা। তোমাকে ঘিরে সকল উৎসব, একটু উষ্ণতার জন্য দিবারাত্রি সমুদ্রদর্শন শেষ হয় না, হয় না শেষ বৃষ্টিতে ভেজা।

মো. রেজাউল করিম

No comments:

Post a Comment