১৭ শতকের দিকে জাপানের টোকিও ও ওসাকা শহরে নৃত্য ও সংগীতশিল্পী-রূপে গেইশাদের আবির্ভাব। প্রথমদিকে পেশাটিতে পুরুষেরা থাকলেও ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে নারীরা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এ ধারা এখনো বজায় আছে। পুরুষের ইন্দ্রীয় সুখের জন্য গেইশা-নারীরা কাজ করলেও এরা সাধারণত শয্যাসঙ্গী হয় না।
‘আমি মানুষের চোখ দেখে দেখে ক্লান্ত। আমি যা নই, তা হওয়ার ভান করে ক্লান্ত, তোষামোদ পেতে পেতে ক্লান্ত। আমি নিজেকে একজন দিলখোলা সৎ মানুষ হিসেবে দেখতে চাই, যা অনুভব করি তা করতে চাই। কিন্তু পেশার কারণে তা কোনো দিনও হবে না।’ জাপানের কিয়োটো শহরের জীবন নিয়ে ক্লান্ত এক গেইশা-নারীর বয়ান এটি। ওই দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও সম্পদশালী ভোগী পুরুষের মনোরঞ্জনে নিয়োজিত নারীদের গেইশা নামে আখ্যায়িত করা হয়। এসব নারী জীবিকার জন্য ওই সব পুরুষের কাছে ফেরি করে ফেরে তাদের শিল্পীসত্তা।
কঠোর বিধিনিষেধ আর গোপনীয়তার বেড়াজালে বাঁধা গেইশাদের জীবন। ১৭ শতকের দিকে জাপানের টোকিও ও ওসাকা শহরে নৃত্য ও সংগীতশিল্পী-রূপে এদের আবির্ভাব। প্রথমদিকে পেশাটিতে পুরুষেরা থাকলেও ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে নারীরা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এ ধারা এখনো বজায় আছে। পুরুষের ইন্দ্রীয় সুখের জন্য গেইশা-নারীরা কাজ করলেও এরা সাধারণত শয্যাসঙ্গী হয় না। কেউ যদি হয়, তবে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত, সেখানে তার ইচ্ছা ও প্রেমই থাকে মুখ্য। গেইশারা পতিতা নয়, বরং বলা যায় এরা ক্ষমতাবান পুরুষের মাঝে স্বপ্ন, বিলাস, রোমান্স ও স্বাতন্ত্র্য জাগিয়ে তুলতে নিজেদের মেধা-মননের পসরা নিয়ে হাজির থাকে।
এখনকার দিনে জাপানে হাতেগোনা যেসব নারী এ পেশায় আসে, তাদের মূলত রোমান্স ও ভালোবাসার প্রতিমূর্তি হিসেবেই দেখা হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময় জন্মসূত্রে ও টিকে থাকার জন্য এ পেশায় আসতে বাধ্য হতো নারীরা। গেইশারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী সিল্কের কিমোনো পরে, আর তাদের চেহারা ঢাকা থাকে পুরু মেকআপে। সেই সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার হয় তাদের আরেক আকর্ষণ। এসব নারীকে জাপানের ঐতিহ্যবাহী চা পানের অনুষ্ঠান সম্পর্কে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ‘সামিসেন’ নামের বাদ্যযন্ত্র বাজানো ও নাচের ওপরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। নাচই হলো লোকসম্মুখে এসব নারীর মেধা প্রকাশের মূল মাধ্যম। তবে এদের মেধার সত্যিকার পরিচয় পাওয়া যায় নৈশ পার্টিগুলোতে। এসব পার্টিতে পুরুষেরা ডিনার করতে বসলে তাদের হাতে হাসিমুখে সুরার পাত্র তুলে দেয় মোহময়ী গেইশারা। তবে পুরুষেরা যাতে মাতাল না হয়, সে দিকেও কঠোর নজর থাকে এসব মোহিনীর। আকণ্ঠ পানের পর ক্ষমতাধরেরা আয়েশ করে বসলে গেইশারা হালকা তানে কণ্ঠে তুলে নেয় সুর। চারদিকে ছড়িয়ে দেয় সুরের মায়াজাল। তবে জাপানি পুরুষেরা এসব নারীকে সবচেয়ে বেশি কদর করে গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুগম্ভীর আলাপে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য। গেইশাদের অংশগ্রহণে ক্লান্তিকর কথাবার্তাও তখন হয়ে ওঠে আনন্দের। তাই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে গেইশাদের সাম্প্রতিক খবরাখবর থেকে শুরু করে নাটক-সিনেমা-সুমো জগতের নানা গুজব সম্পর্কেও খুব ভালোভাবে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়।
গুরুত্বপূর্ণ নানা বৈঠকে অংশ নেওয়া গেইশারা গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রেও ভীষণ পারঙ্গম। মেকআপে ঢাকা তাদের মুখমণ্ডলে খুব কমই আবেগ খেলে। মক্কেলের গোপন তথ্য গোপন রাখতে নীরবতাকে তারা বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। কঠোর শৃঙ্খলা আর মেধা দিয়ে তারা জীবনের জন্য নির্মাণ করে চলে সুন্দরকে। এরা নিজেকে পুরুষের চোখে আদর্শ নারী করে তোলে। হয়ে ওঠে জীবন্ত শিল্প।
কিন্তু রংতুলির আঁচড় আর নিয়মশৃঙ্খলা, নীরবতার বর্মে ঢাকা পড়ে থাকে এসব নারীর ব্যক্তিজীবনের সব রং, মাধুরী, চাওয়া-পাওয়া। পুরুষের চোখে, জাপানি সমাজের চোখে এরা কেবলই গেইশা। তাই কিয়োটোর প্রভাবশালী এক পুরুষ জীবনের দীর্ঘ সময় গেইশাদের সঙ্গে কাটিয়েও খুবই নির্মোহভাবে বলতে পারেন, ‘আমি রোমাঞ্চ ভালোবাসি, বাস্তব নয়। মোহিনী জাল সৃষ্টিতে গেইশারা কী কৌশল খাটায়, তা আমার জানার দরকার নেই। আমি তাদের সঙ্গ পছন্দ করি। কিন্তু তাদের জীবনের দুঃখের কাসুন্দি শুনতে চাই না। আমি তাদের স্বপ্ন হিসেবেই দেখতে চাই। আমার জন্য স্বপ্ন জিইয়ে রাখা তাদের জন্যও জরুরি। এটাই আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক—ব্যস, শেষ।’
‘আমি মানুষের চোখ দেখে দেখে ক্লান্ত। আমি যা নই, তা হওয়ার ভান করে ক্লান্ত, তোষামোদ পেতে পেতে ক্লান্ত। আমি নিজেকে একজন দিলখোলা সৎ মানুষ হিসেবে দেখতে চাই, যা অনুভব করি তা করতে চাই। কিন্তু পেশার কারণে তা কোনো দিনও হবে না।’ জাপানের কিয়োটো শহরের জীবন নিয়ে ক্লান্ত এক গেইশা-নারীর বয়ান এটি। ওই দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও সম্পদশালী ভোগী পুরুষের মনোরঞ্জনে নিয়োজিত নারীদের গেইশা নামে আখ্যায়িত করা হয়। এসব নারী জীবিকার জন্য ওই সব পুরুষের কাছে ফেরি করে ফেরে তাদের শিল্পীসত্তা।
কঠোর বিধিনিষেধ আর গোপনীয়তার বেড়াজালে বাঁধা গেইশাদের জীবন। ১৭ শতকের দিকে জাপানের টোকিও ও ওসাকা শহরে নৃত্য ও সংগীতশিল্পী-রূপে এদের আবির্ভাব। প্রথমদিকে পেশাটিতে পুরুষেরা থাকলেও ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে নারীরা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এ ধারা এখনো বজায় আছে। পুরুষের ইন্দ্রীয় সুখের জন্য গেইশা-নারীরা কাজ করলেও এরা সাধারণত শয্যাসঙ্গী হয় না। কেউ যদি হয়, তবে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত, সেখানে তার ইচ্ছা ও প্রেমই থাকে মুখ্য। গেইশারা পতিতা নয়, বরং বলা যায় এরা ক্ষমতাবান পুরুষের মাঝে স্বপ্ন, বিলাস, রোমান্স ও স্বাতন্ত্র্য জাগিয়ে তুলতে নিজেদের মেধা-মননের পসরা নিয়ে হাজির থাকে।
এখনকার দিনে জাপানে হাতেগোনা যেসব নারী এ পেশায় আসে, তাদের মূলত রোমান্স ও ভালোবাসার প্রতিমূর্তি হিসেবেই দেখা হয়। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের সময় জন্মসূত্রে ও টিকে থাকার জন্য এ পেশায় আসতে বাধ্য হতো নারীরা। গেইশারা সাধারণত ঐতিহ্যবাহী সিল্কের কিমোনো পরে, আর তাদের চেহারা ঢাকা থাকে পুরু মেকআপে। সেই সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার হয় তাদের আরেক আকর্ষণ। এসব নারীকে জাপানের ঐতিহ্যবাহী চা পানের অনুষ্ঠান সম্পর্কে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ‘সামিসেন’ নামের বাদ্যযন্ত্র বাজানো ও নাচের ওপরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। নাচই হলো লোকসম্মুখে এসব নারীর মেধা প্রকাশের মূল মাধ্যম। তবে এদের মেধার সত্যিকার পরিচয় পাওয়া যায় নৈশ পার্টিগুলোতে। এসব পার্টিতে পুরুষেরা ডিনার করতে বসলে তাদের হাতে হাসিমুখে সুরার পাত্র তুলে দেয় মোহময়ী গেইশারা। তবে পুরুষেরা যাতে মাতাল না হয়, সে দিকেও কঠোর নজর থাকে এসব মোহিনীর। আকণ্ঠ পানের পর ক্ষমতাধরেরা আয়েশ করে বসলে গেইশারা হালকা তানে কণ্ঠে তুলে নেয় সুর। চারদিকে ছড়িয়ে দেয় সুরের মায়াজাল। তবে জাপানি পুরুষেরা এসব নারীকে সবচেয়ে বেশি কদর করে গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুগম্ভীর আলাপে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য। গেইশাদের অংশগ্রহণে ক্লান্তিকর কথাবার্তাও তখন হয়ে ওঠে আনন্দের। তাই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে গেইশাদের সাম্প্রতিক খবরাখবর থেকে শুরু করে নাটক-সিনেমা-সুমো জগতের নানা গুজব সম্পর্কেও খুব ভালোভাবে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়।
গুরুত্বপূর্ণ নানা বৈঠকে অংশ নেওয়া গেইশারা গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রেও ভীষণ পারঙ্গম। মেকআপে ঢাকা তাদের মুখমণ্ডলে খুব কমই আবেগ খেলে। মক্কেলের গোপন তথ্য গোপন রাখতে নীরবতাকে তারা বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। কঠোর শৃঙ্খলা আর মেধা দিয়ে তারা জীবনের জন্য নির্মাণ করে চলে সুন্দরকে। এরা নিজেকে পুরুষের চোখে আদর্শ নারী করে তোলে। হয়ে ওঠে জীবন্ত শিল্প।
কিন্তু রংতুলির আঁচড় আর নিয়মশৃঙ্খলা, নীরবতার বর্মে ঢাকা পড়ে থাকে এসব নারীর ব্যক্তিজীবনের সব রং, মাধুরী, চাওয়া-পাওয়া। পুরুষের চোখে, জাপানি সমাজের চোখে এরা কেবলই গেইশা। তাই কিয়োটোর প্রভাবশালী এক পুরুষ জীবনের দীর্ঘ সময় গেইশাদের সঙ্গে কাটিয়েও খুবই নির্মোহভাবে বলতে পারেন, ‘আমি রোমাঞ্চ ভালোবাসি, বাস্তব নয়। মোহিনী জাল সৃষ্টিতে গেইশারা কী কৌশল খাটায়, তা আমার জানার দরকার নেই। আমি তাদের সঙ্গ পছন্দ করি। কিন্তু তাদের জীবনের দুঃখের কাসুন্দি শুনতে চাই না। আমি তাদের স্বপ্ন হিসেবেই দেখতে চাই। আমার জন্য স্বপ্ন জিইয়ে রাখা তাদের জন্যও জরুরি। এটাই আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক—ব্যস, শেষ।’
সুমাইয়া তাজারিন
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
No comments:
Post a Comment