Tuesday, 21 September 2010

সোনাদানার কাহিনি

অষ্টম শতাব্দীতে জাপানের প্রথম রাজধানী নারার ডোদাই-জি বৌদ্ধ মঠে একটা বিশাল (৫৩ ফুট উঁচু) ঢালাই ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি রাখার জন্য বড় একটা হল নির্মাণ করা হয়। মূর্তিটির ওজন ছিল এক মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি এবং এটা কোয়ার্টার টন সোনায় মোড়ানো ছিল।

এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় স্বর্ণপিণ্ডের নাম হলো ‘ওয়েলকাম স্ট্রেঞ্জার’, ওজন প্রায় ২০০ পাউন্ড। ১৮৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বালারাটের কাছে জন ডিমন এবং রিচার্ড ওটেস পিণ্ডটি আবিষ্কার করেন।

ইংরেজ অভিযাত্রী মার্টিন ফ্রবিশার ১৫৭৮ সালে ইংল্যান্ডে রীতিমতো গোল্ড ফিভার তৈরি করে ফেলেন, তিনি বাফিন দ্বীপ থেকে ২০০ টন চকচকে সোনার আকরিক নিয়ে ফিরে আসেন। আরও সোনা পাওয়ার আশায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকরিকটা ছিল শুধু আয়ন পাইরাইট (বোকার স্বর্ণ)। শেষ পর্যন্ত ওটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হয়।
 
মধ্যযুগীয় আলকেমিস্টরা সস্তা ধাতু থেকে সোনা তৈরির পথ খুঁজছিলেন। তাঁরা ব্যর্থ হন আর এর ফলে তাঁরা অবজ্ঞার শিকারও হন। যা হোক, এই খোঁজাখুঁজির ফলে তাঁরা শক্তিশালী এসিড আবিষ্কার করে ফেলেন: সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড—এই পদার্থগুলো আধুনিক শিল্পে সোনার চেয়েও দামি। এর জন্য তাঁরা কোনো কৃতিত্ব পান না।

প্রতি আউন্স সোনা পাওয়ার জন্য খনিশ্রমিকদের ২ দশমিক ৫ মাইল পর্যন্ত খনন করতে হয়।

মার্থা ওয়াশিংটনের সিলভার সার্ভিস ছিল রুপার প্রথম উৎস, যে রুপা প্রথম ইউএস মুদ্রায় ব্যবহূত হয়।

উইলিয়াম হাইড ওলেস্টনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্লাটিনাম নিয়ে কাজ করেছেন, বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য একে নমনীয় করার চেষ্টা করেছেন, অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে গবেষণা করেছেন তিনি, তাঁর পরীক্ষাগারে কারও ঢোকার অনুমতি ছিল না। ১৮০০ সালের দিকে ধাতুটি নিয়ে কাজ করে ওলেস্টন বেশ অর্থ উপার্জন করেছিলেন। প্লাটিনাম এমনিতে খুব ভারী, দুর্লভ এবং সোনার চেয়েও নিষ্ক্রিয়।

সাগরে থাকা সোনার পরিমাণ নয় মিলিয়ন টন, মানুষের ইতিহাসে খনি থেকে মোট যে পরিমাণ স্বর্ণ উত্তোলন করা হয়েছে, তার প্রায় ১৮০ গুণ। সাগরে সোনা এমনভাবে ছড়ানো যে সেখান থেকে নিষ্কাশন করাটা লাভজনক নয়।

হীরা হলো একমাত্র রত্ন, যার মাত্র একটি মৌল কার্বন দিয়ে গঠিত। যদিও স্ফটিক স্বচ্ছ, কিন্তু গুঁড়ো করার পর ওটা হয়ে যায় কালো। রত্নের কাঠিন্যের ওপর নির্ভর করে হীরাকে ১৪০০ থেকে ১৬৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মাঝে সম্পূর্ণরূপে দহন করা যায়।

স্প্যানিশদের দক্ষিণ আমেরিকা জয়ের আগে ইন্ডিয়ানদের (ইনকা) কাছে কোনো লোহা ছিল না। তার বদলে তাদের কাছে ছিল প্রচুর পরিমাণে সোনা। ওই সোনা শুধু সাজসজ্জা বা অলংকারেই ব্যবহূত হতো তা নয়, বরং প্রতিদিনকার নিত্য ব্যবহার্য বস্তু যেমন—পেরেক, খাবারের তৈজসপত্র, চিরুনি তৈরিতেও ব্যবহূত হতো।

মিসরীয়রা তাদের নেতাদের সমাধিস্থ করার সময় মরদেহের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ সোনা-রুপা দিয়ে দিত। কারণ তাদের ধারণা ছিল, মৃত নেতারা পরকালে ওসব ব্যবহার করবে, যা তাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছিল। কবরচোরেরা কবর থেকে, তাদের উদ্দেশ্য যা-ই থাকুক না কেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সোনা ও রুপা ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মিসরীয় সমাজের চাকা সচল করতে সাহায্য করে।

মিসরীয় ইতিহাসের প্রথম দিকে রুপার মূল্য ছিল সোনার চেয়েও বেশি। কারণ, রুপাকে পিণ্ড আকারে খুব কমই পাওয়া যেত।

বছরে ৪০০ টন সোনা লাভের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার র্যান্ড গ্রুপকে তাদের খনিগুলো থেকে ৬০ মিলিয়ন টন আকরিক উত্তোলন ও চূর্ণ করতে হয়।

অ্যাডমিরাল স্যার ক্লাউডসলি শোভেল, ব্রিটিশ নৌবহরের কমান্ডার-ইন-চিফ, ১৭০৭ সালে একজন বৃদ্ধ মহিলার হাতে নিহত হন। সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের পাথরে ধাক্কা লেগে জাহাজ হারিয়ে তিনি বহু কষ্টে তীরে পৌঁছে ছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধা তাঁকে এই বিশ্বাসে (উপকূলীয় অধিবাসীদের মধ্যে তখন এর প্রচলন ছিল) হত্যা করে, যে দেহ ভেসে আসে, সেটা পরিত্যক্ত। সে অ্যাডমিরালের আঙুলের পান্নার আংটিটির বৈধ দাবিদার বলেও মনে করে।
 
ভাষান্তর: হাসান খুরশীদ

No comments:

Post a Comment